শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন ড. ইউনূস ধান ক্ষেত থেকে অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার জমি নিয়ে বিরোধ; দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত দোকান বাকীর টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ : বৃদ্ধ নিহত হবিগঞ্জে হত্যা মামলা, আ.লীগ সভাপতিসহ ২শ জন আসামি গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে শামীম ওসমান লুকিয়ে থাকার গুঞ্জন, তাল্লাশি শেষে যা বলছে পুলিশ নগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সারাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর গণভবনের মাছ-হাঁসও নিয়ে গেল জনতা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ

বাহুবল মুক্ত দিবস কবে? জানা নেই মুক্তিযোদ্ধাসহ খোদ প্রশাসনেরও

নিজস্ব প্রতিবেদক : হবিগঞ্জের বাহুবল মুক্ত দিবস কবে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ জানেন না কেউ। এমনকি খোদ প্রশাসনও। শনিবার রাতে বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের ফেইসবুক আইডি থেকে “ বাহুবল মুক্ত দিবস কবে? ”একটি স্ট্যাটাস দিলে সর্বমহলে ব্যাপক হইচই শুরু হয়ে যায়। কেউ বলছেন পহেলা ডিসেম্বর, কেউ বলছেন ৪ ডিসেম্বর আবার কেউ ৭ বা ৮ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের চার যুগ পরও দিবসটি নির্ধারণ না করায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

প্রশাসনের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের কমেন্টে উপজেলার পূর্বজয়পুর গ্রামের ও দৈনিক ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার অভিজিৎ ভট্রাচার্য্য লিখেন, একটি মত হচ্ছে ৪ ডিসেম্বর, আবার আরেকটি মত হচ্ছে ৭ অথবা ৮ ডিসেম্বর। কিন্তু কেউ এর আগে বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি। এর ফলে সঠিক সমাধানেও পৌঁছানো যায়নি। আপনি বাহুবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এবং তাদের মত নিয়ে ৪, ৭ অথবা ৮ ডিসেম্বরের যে কোনো একদিন ঘোষণা দিয়ে দিন। আমরা মানব।

উপজেলার পুটিজুরী এলাকার এফ আর হারিছ নামে আরেক স্থানীয় সাংবাদিক লিখেন, ৬ ডিসেম্বর পুরো হবিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়, তবে বাহুবল মনে হয় এ তারিখেই হতে পারে।

সুবীর দেব নামের এক ব্যক্তি লিখেন, ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও চুনারুঘাট মুক্ত হয়েছিল কিন্তু বাহুবল কবে হয়েছিল সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

মুক্তিযোদ্ধের সামরিক অভিযান দ্বিতীয় খন্ড থেকে নেওয়া প্রাপ্ত তথ্যমতে, নভেম্বর মাসের শেষের দিকেও বাহুবল সদর নিয়ন্ত্রণ করছিল পাকিস্থানী বাহিনী। অথচ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। তাই বাহুবল মুক্ত করার একটি পরিকল্পনা করা হয়। ৪ নম্বর সেক্টরে এ পরিকল্পনা প্রণীত হয়। অপারেশন করার দায়িত্ব গ্রহন করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম। সাথে ছিলেন তার সহযোদ্ধা এম এ রউফ, আব্দুল গণি, মাফিল উদ্দিন, সময়না মিয়াসহ ্আরো ৩০ জন। হাতে তাদের সেই প্রচলিত অস্ত্র রাইফেল, স্টেনগান,এসএমজি,এলএমজি ও গ্রেনেড। পরিকল্পনা অনুযায়ী মানচিত্র ও পথ প্রদর্শক ইত্যাদি সংগ্রহ করার পর রওয়ানা হলেন তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের এ দলটি কোনরকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই বাহুবলের কাছে খাড়াউড়া গ্রামে পৌছে যায়। এখানে থাকার ব্যবস্থা হল তাদের। আহার সরবরাহের দায়িত্ব এলাকার জনগন তাদের কাধে তুলে নিলেন। এখানে অবস্থান নেয়ার পর বাহুবল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করে আক্রমনের দিন তারিখ র্নিধারণ করা হল। তখনো বাহুবল থানার সামনেই শত্রুরা তাদের ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করছিল। পহেলা ডিসেম্বর রাত ৪টার দিকে এ ভবনের সামনে এসে অবস্থান করেন ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে তারা রাত ৮টায় খাাগাউড়া থেকে রওয়ানা দিয়ে ৫ কিলোমিটার নৌকাায় ও দেড় কিলোমিটার পায়ে হেটে গন্তব্যস্থলে পৌছান। ভবনের পূর্ব ও দক্ষিন দিকে অবস্থান করলেন তারা। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করে গুলিবর্ষণ। বিনিময়ে ভারী অস্ত্র দিয়ে পাকিস্থানীরা জবাব দেয়। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত প্রবল ও প্রচন্ড গোলাবর্ষনের পরও শত্রুরা নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। মাত্র দেড় ঘন্টা যুদ্ধের পর তারা ঘাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাদের দোসর ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। বাহুবল শত্রুমুক্ত হয়। তবে এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ক্ষতি হয়নি।

উপজেলার পূর্ব জয়পুর গ্রামের প্রধান মুরুব্বী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন খান বলেন, উপজেলার সোয়াইয়া থেকে জমশের, আব্দুল্লা, সিরাজ ও আবুল হোসেন সহ আমরা অন্ততঃ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা মিলে বিজয় দিবসের সপ্তাহ খানেক আগে থানায় হামলা করে পতাকা উড়িয়ে মধুপুর ক্যাম্পে যাই। তবে তারিখটা অবশ্যই ৬ তারিখের পর হবে। আর ওই দিন থানার ওসি এই ঘটনার ওপর একটি সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছিলেন যা পরে তার সাথে আমি ব্যক্তিগত আলাপে জানতে পেরেছিলাম। মনে হয় থানার ডায়েরিটি খোজ করলে দিনটি নির্ধারণের জন্য সহায়ক হতে পারে। এছাড়া এইবার আমি উপজেলা কমান্ডার সহ দু’এক জনের সাথে কথা বলে তারিখটা নির্ধারণের জন্য চেষ্টা করব।

বাহুবল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল হোসেন বলেন, বাহুবল থানায় কয়েক ধাপে আক্রমন করা হয়েছিল। সর্বশেষ আমরা বিজয়ের ৪/৫ দিন আগে থানায় আক্রমন করেছিলাম। তবে এই দিনটি আজও আমরা নির্ধারণ করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসন মিলে আলোচনা করে এই দিনটি নির্ধারণ করা খুবই দরকার। আমি অচিরেই এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com